শিক্ষা, অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে নিয়ে যাওয়ার এক অনন্য হাতিয়ার। এই শিক্ষা আমরা শুধু গতানুগতিক স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্যবিদ্যালয় থেকে নয় বরঞ্চ বাস্তব জীবন থেকেও পেয়ে থাকি। শিক্ষা এমন কোনো বস্তু নয় যা আমরা কেবলমাত্র বইয়ের পাতায় খুঁজে পাই, জীবনে চলার পথে, প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের কিছু না কিছু নতুন জিনিস শেখার নামই ‘শিক্ষা’ আর এই শিক্ষা যার থেকে আমরা পাই তিনি আমাদের শিক্ষক।
আজকের এই পোস্টে আমরা এমন এক অনন্য শিক্ষকের সম্পর্কে জানব যিনি শুধুমাত্র শিক্ষকই নন বরঞ্চ একজন দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী এবং লেখকও ছিলেন। তিনি আর কেউ নন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন।
আজকের এই বিশেষ দিন অর্থাৎ শিক্ষক দিবস যাকে স্মরণ করে পালন করা হয় সেই বিখ্যাত শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু অজানা তথ্য।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর প্রাথমিক জীবন:
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন 1888 সালের 5ই সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুত্তনিতে এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সর্বপল্লী বীরস্বামী। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করার জন্য ছেলেবেলায় তিনি তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। পড়াশোনার বিষয়ে ছেলেবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন ।
1904 সালে মাত্র 16 বছর বয়সে তিনি শিবুকামু দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একটি পুত্র এবং পাঁচটি কন্যা সন্তান ছিল। তার পুত্র সর্বপল্লী গোপাল ভারতের একজন মহান ইতিহাসবিদ ছিলেন।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জীবনী
নাম | ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ |
জন্ম | 5ই সেপ্টেম্বর 1888 |
জন্মস্থান | তিরুত্তনি, তামিলনাড়ু |
পিতা-মাতা | সর্বপল্লী বীরস্বামী এবং সীতাম্মা |
রাজনৈতিক দল | স্বাধীন |
ধর্ম | হিন্দু |
মৃত্যু | 17ই এপ্রিল ,1975 |
শিক্ষাজীবন:
স্কুল জীবনের প্রথম থেকে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিরুত্তনি গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তাকে তিরুপতির লুথারণ ক্রিস্টান মিশন স্কুলে ভর্তি করানো হয় যেখানে তিনি 1896-1900 সাল পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর তিনি দর্শন শাস্ত্র নিয়ে ‘MA’ করার জন্য মাদ্রাজ খ্রিষ্টান কলেজে ভর্তি হন। তার শিক্ষা গ্রহণের মূল বিষয় ছিল ‘বেদান্ত দর্শন’। এরপর 1906 সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন:
কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি 1909 সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষক হন। এরপর তিনি দেশ ও বিদেশের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। অবশেষে তিনি যে কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন অর্থাৎ মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।
রাজনৈতিক জীবন
1947 সালের 15ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কূটনৈতিক কাজগুলি সম্পন্ন করার জন্য সম্মত হন। এছাড়া 1947 থেকে 1949 সাল পর্যন্ত তিনি গণপরিষদের সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। তিনি তার শিক্ষাজীবনে যেমন একাধিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ঠিক তেমনি তার রাজনৈতিক জীবনও সেই সময়কার সকল ভারতবাসীর প্রশংসা অর্জন করেছিল। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন 1952 সালে 13ই মে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং 13ই মে 1962 সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়ভার পালন করেন। এরপর 13ই মে 1962 সালে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর লেখনি:
শিক্ষাজীবন এবং তার রাজনৈতিক জীবনের দায়ভার সামলানোর সাথে সাথে সে সময় তিনি প্রচুর লেখালেখি করেছিলেন যার মধ্যে কিছু গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলো- Eastern Religions and Western Thought, Religion, Science, and Culture, Hindu Darshan, The Philosophy of Hinduism, Mahatma Gandhi: Essays and Reflections, The philosophy of Rabindranath Tagore, Search for Truth ইত্যাদি।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর পুরস্কার সমূহ:
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কাজের জন্য বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা প্রচুর পুরস্কার-এর সহিত তাকে সম্মানিত করা হয়। নিচে এই পুরস্কারগুলি উল্লেখ করা হলো-
- 1931 সাল: ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইট‘ উপাধিতে ভূষিত করে।
- 1933-1937 সাল: সাহিত্য বিভাগে পাঁচবার ‘Nobel‘ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
- 1938 সাল: ব্রিটিশ একাডেমির ‘Fellow‘ হিসেবে মনোনীত হন।
- 1954 সাল: ভারতের সর্বোচ্চ Civilian সম্মান ‘ভারতরত্ন‘ পুরস্কার পেয়েছেন।
- 1961 সাল: জার্মান বুক ট্রেড-এর তত্ত্বাবধানে পেয়েছেন ‘শান্তি পুরস্কার‘।
- 1963 সাল: Britain- এর ‘Order of Merit‘ পুরস্কার পেয়েছেন।
- 1968 সাল: এই বছর তিনি পেয়েছেন ‘সাহিত্য একাডেমী‘ পুরস্কার।
- 1975 সাল: তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি মার্কিন সরকারের ‘টেম্পলটন‘ পুরস্কারে ভূষিত হন।
জীবনাবসন:
দীর্ঘকালীন অসুস্থতার পর ১৭ই এপ্রিল 1975 সালে এই মহান প্রতিভাবান ব্যক্তির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।
শিক্ষক দিবস কবে ও কেন পালন করা হয়?
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তখন ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন পালন করার অনুরোধ করা হলে তিনি বলেছিলেন এই দিনটা জন্মদিন হিসেবে পালন না করে যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় তাহলে তিনি বেশি খুশি হবেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে তার অসাধারণ প্রতিভা এবং অবদানকে স্মরণ করে 1962 সালের 5ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবছর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
উপসংহার:
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের ছেলেবেলায় কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা করে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া পর্যন্ত তার কর্ম সকল ভারতবর্ষের মনে অমর হয়ে থাকবে। তিনি শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়কই নন একজন লেখক এবং শিক্ষকও ছিলেন যিনি তার শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের অন্ধকারকে দূর করতে চেয়েছিলেন।
1. শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য কি?
উত্তর: আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।
2. শিক্ষক দিবস কেন পালন করা হয়?
উত্তর: ৫ই সেপ্টেম্বর আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।
3. শিক্ষক দিবস কবে পালন করা হয়?
উত্তর: প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
4. শিক্ষক দিবস কার জন্মদিন?
উত্তর: শিক্ষক দিবস আমাদের দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জন্মদিন।
5. ‘TEACHER’ শব্দের পুরো কথা কি?
উত্তর: ‘Talented Elegant Awesome Charming Helpful Efficient Receptive’.
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের gkguide.in পক্ষ দেখে অসংখ্য শুভেচ্ছা….
1 thought on “শিক্ষক দিবস 2023: ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর জীবনী|| সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রচনা বাংলা”